লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, অক্টোবর ১৫ (থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - কানাডিয়ান ইয়োগা প্যান্টের ব্রান্ড লুলুলেমন অ্যাথলেটিকা গত মঙ্গলবার বলেছে যে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে তাদের জন্য কাজ করা কর্মীদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়, তা তারা তদন্ত করে দেখবে।
কারখানা শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদেরকে মৌখিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন, প্রহৃত হন এবং তাদেরকে বলপূর্বকভাবে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয়। অথচ মাস শেষে বেতন দেয়া হয় মাত্র ৮৫ পাউন্ড (১১০ ডলার)- যা লুলুলেমনের বিক্রি করা এক জোড়া লেগিংসের দামের চেয়েও কম। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে মাসিক ৯৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কর্মী সংগঠনগুলো দাবি করেছে মাসপ্রতি অন্তত ১৬ হাজার টাকা (১৮৯ ডলার)।
তৈরি পোশাক উৎপাদনশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় হওয়ার পরও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ সব সময়ই নজরদারিতে থাকে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে, যেখানে ১১০০ এর বেশি শ্রমিক প্রাণ হারান।
এ বিষয়ে লুলুলেমনের একজন প্রতিনিধি থম্পসন রয়টার্সকে ই-মেইলে বলেন, “লুলুলেমন এর সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং উৎপাদন দলের কয়েকজন সদস্য সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো কর্মীদের সাথে কথা বলা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নেওয়া।”
তিনি আরো বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি অলাভজনক তৃতীয় পক্ষের সাথে আমরা কাজ করবো। যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানে আমাদের কাজের পরিস্থিতি খুবই সীমিত, তারপরও আমরা প্রতিটি কর্মী যাতে যে কোনো বাজে আচরণ থেকে মুক্ত থাকে এবং তাদের ভালো ব্যবহার করা হয় তা নিশ্চিত করবো।”
লুলুলেমন আরো জানায়, আপাতত চট্টগ্রামের কারখানাটিতে (যা ঢাকা থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত) তাদের কোনো নতুন ফরমায়েশের পরিকল্পনা নেই।
যে কারখানাটির বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে সেটি মূলত কোরিয়া-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ইয়ংগন কর্প নামের প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের ই-মেইলের কোনো জবাব দেয়নি।
তবে ইয়ংগন গার্ডিয়ানকে বলেছে যে, তারা ইতোমধ্যেই অভিযোগ বিষয়ে আন্ত:প্রাতিষ্ঠানিক যাচাই শুরু করেছে এবং তাদের কর্মীদের মতামত জানানোর জন্য ও বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করার জন্য উৎসাহিত করেছে।
চীনের পর বাংলাদেশ হলো দ্বিতীয় বৃহত্তর দেশ যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানিপণ্যের ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক এবং এই খাতে মোট চার মিলিয়ন চাকরি আছে। অথচ বড় বড় ব্রান্ডগুলো সব সময়ই দায়িত্বের সাথে পণ্য যোগান দেওয়ার চাপে থাকে।
এ দিকে ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রুবানা লুলুলেমনের তদন্তের উদ্যোগকে ‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।
থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে তিনি বলেন, “এ বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতে এটা বলা হয়নি যে তারা কতোজন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “বাস্তবতা হলো কর্মীরা যে অভিযোগ করেছে বা যে সব তথ্য দিয়েছে তা কিন্তু যাচাই করা হয়নি। ফলে এই বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোকে আমরা ত্রুটিপূর্ণ মনে করছি।”
(১ ডলার= ০.৭৮৩৮ পাউন্ড) (প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন নাঈমুল করিম @Naimonthefield, সম্পাদনা করেছেন বেলিন্ডা গোল্ডস্মিথ। অনুগ্রহ করে থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ক্রেডিট দিন, যা থম্পসন রয়টার্সের দাতব্য শাখা এবং যা মানবিক, নারী ও এলজিবিটি+ অধিকার, মানবপাচার, সম্পত্তির অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। ভিজিট করুন: http://news.trust.org)
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.